দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ সড়কের পাশে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করার ঘোষণা দেওয়ার পর ভয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছেন ঘোড়াঘাট উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও বাড়ির মালিক সহ অবৈধ দখলদাররা। তবে মহাসড়ক থেকে কতদুরে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে তা জানানো হয়নি সওজের পক্ষ থেকে।

দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুইধারে সওজের জায়গায় অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা বিভিন্ন দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর সহ বিভিন্ন স্থাপনা নিজ দায়িত্ব সরিয়ে নেওয়ার জন্য গত সপ্তাহে মাইকে প্রচার করে নোটিশ দেয় দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ। বলা হয় ১৮ জুলাই হতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে সওজের পক্ষ থেকে।

এই ঘোষণার পর থেকেই ঘোড়াঘাট উপজেলায় মহাসড়কের দুই ধারে অবৈধ ভাবে স্থাপনা তৈরিকারীরা আতংকিত হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে
ছোট ও মাঝারি আকারের বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, দোকানদার এবং অর্ধশত বাড়ির মালিক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। উপজেলার রানীগঞ্জ বাজার, বাসস্ট্যান্ড ও আজাদমোড় সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় মহাসড়কের ধারঘেঁষে শত শত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর, ব্যাংক ও অফিস সহ নানা রকমের স্থাপনা আছে। তবে এসব স্থাপনার সবগুলো অবৈধ জায়গায় উপরে নয়। কিছু কিছু স্থাপনা পুরোপুরি সওজের ভূমির উপরে এবং কিছু স্থাপনার কিছু অংশ সওজের ভূমির উপরে গড়ে উঠেছে। তবে অধিকাংশ স্থাপনা নিজস্ব জায়গার উপরে আছে।

ঘোষনা অনুযায়ী গত ১৮ জুলাই বিরামপুর উপজেলায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন দিনাজপুর সওজ বিভাগের কর্মকর্তারা। এতে নেতৃত্ব দেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের ভূমি আইন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ খান। পরেরদিন ১৯ জুলাই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় ফুলবাড়ী উপজেলায়। এই দুই উপজেলায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও, ঘোড়াঘাট উপজেলায় এই অভিযান শুরু করেনি সওজ।

এরআগে গত ২০১৯ সালে দিনাজপুর থেকে গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত ১০৮ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হলে ঘোড়াঘাট উপজেলায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছিলেন সড়ক বিভাগ। সেই অভিযানে নিজেদের প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ হওয়ায় পথে বসে গিয়েছিলেন এই উপজেলার কয়েকশত ছোট বড় ব্যবসায়ী ও বাড়িঘরের মালিক। সে সময় ম্যাপ অনুযায়ী নিজেদের ভূমিতে সীমানা পিলার পুতে দেয় সওজ বিভাগ। তবে সেই রেশ কাটিয়ে তারা আবারো নতুন করে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি গড়ে তোলেন। অনেকে সড়কের জায়গার উপরেই অবৈধ ভাবে তৈরি করেছেন বসতি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সহ নানা স্থাপনা।

ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার আজাদমোড়ের কাপড় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম (৩৭) বলেন, ‘তিন বছর আগেই আমাদের সব দোকানপাট ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিলো। পথে বসে গিয়েছিলাম আমরা। নতুন করে ধারদেনা করে আবার ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করছি। এখন আবার যদি আমাদের প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দেওয়া হয় তবে ভিক্ষাবৃত্তি করে খাওয়া লাগবে অথবা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে হবে।’ বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা আশার আলো (২৮) বলেন, ‘রাস্তা থেকে অনেক দুরে আমার বাড়ি। গত উচ্ছেদ অভিযানে শেষ সম্বল বাড়িটি ভেঙ্গে দিয়েছিলো। নতুন করে আবারো মাথা গোজার ঠাঁই তৈরি করছি। এখন শুনছি আবার নাকি ভেঙ্গে দিবে। আমরা প্রায় অর্ধশত গরিব অসহায় লোক ঘর হারানোর দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’

এদিকে দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনফ সরকার বলেন, ‘ঘোষণা দেওয়ার পর দুটি উপজেলায় আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। আপাতত এই অভিযান স্থগিত আছে। নতুন করে নির্দেশনা পেলে আমরা আবারো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবো। সে সময় ঘোড়াঘাট সহ অন্য উপজেলা গুলোতে আমাদের ভূমি দখল করে অবৈধ ভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা ও দোকানপাট উচ্ছেদ করা হবে।’

ফটো ক্যাপশন- গত ১৮ জুলাই ঘোড়াঘাটের পাশ্ববর্তী বিরামপুর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

বার্তা বাজার/জে আই