পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিরুদ্ধে। শনিবার বিকেলে তিনি কয়েকশ মোটর বাইক ও অর্ধ শতাধিক মাইক্রো ও প্রাইভেট কার নিয়ে পৌরসভায় শোডাউন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারদলীয় নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ফাইজুর রশিদ খসরু জোমাদ্দার অভিযোগ করে বলেন, শনিবার বিকেলে জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পুলিশ প্রটোকলে ভান্ডারিয়া উপজেলার প্রবেশমুখ বটতলা মোড় থেকে শতাধিক মোটরসাইকেল ও অর্ধশত প্রাইভেট কার নিয়ে ভান্ডারিয়ায় প্রবেশ করেন। এসময় তার সাথে থাকা কয়েকশ নেতাকর্মী জাতীয় পার্টি (জেপি)’র প্রার্থীর পক্ষে সাইকেল মার্কার স্লোগান দেয়। শত শত গাড়ি সেসময এক সাথে হর্ন দিতে থাকে। এতে পুরো পৌর শহরে এক ধরণের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রবেশ করায় ভোটে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী।

তিনি জানান, জাতীয় পার্টি-জেপি’র বাই সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী মাহিবুল হোসেন মাহিম স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর আপন চাচাতো ভাই।

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় এমপি এই বহর নিয়ে ভান্ডারিয়া সরকারী কলেজ, উপজেলা পরিষদ, শাহবুদ্দিন মাদ্রাসা, শহরের রিজার্ভ পার্ক পুকুর, ভান্ডারিয়া বাজার, মডেল স্কুল, টিএনটি অফিস, শিকদার বাড়ী রোড এবং বাসস্টান্ডসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এসময় তাকে একটি কালো জিপ গাড়ির সামনের সিটে বসে হাত নাড়ছে দেখা গেছে। এবং সেসময় তাকে ভান্ডারিয়া থানার একটু পুলিশ ভ্যান সার্বক্ষণিক প্রটোকল দেয়।

স্থানীয়দের শঙ্কা, নির্বাচনের আগে এভাবে শোডাউন চলতে থাকলে সামনে নির্বাচনী পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এমনকি তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে পরিস্থিতি। আগামী ১৭ জুলাই ভান্ডারিয়া পৌরসভার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের বিধিমালা অনুযায়ী, মন্ত্রী এমপি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য আইনে বলা আছে, তফসিল ঘোষণার পর কোনো মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য তার এলাকায় গেলে প্রটোকল পাবেন না। এ সময় তারা কোনো উন্নয়নমূলক কাজও উদ্বোধন করতে পারবেন না যা প্রচারণা বলে গণ্য হতে পারে। শুধুমাত্র চলতি প্রকল্প বাদে এ সময় কোনো অনুদান দেয়ারও অনুমোদন নেই। নতুন কোনো প্রকল্প নেয়া যাবে না। কোনো মন্দির, মসজিদ বা গির্জায় ভোট চাইতে পারবেনা না প্রার্থীরা। এছাড়া বহর নিয়ে এলাকায়ও যেতে পারবেন না বলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে আইনে। শুধু মাত্র ভোটের সময় ভোট দিতে পারবেন। দেশের আইনে নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে জরিমানা ও জেল দু’ধরনের শাস্তির ব্যবস্থাই রয়েছে।

এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অব. মো. আহসান হাবিব খান বলেন, এভাবে বহর নিয়ে প্রবেশ করার এখতিয়ার সংসদ সদস্যের নেই। এটি সম্পূর্ণ আচরন বিধি লঙ্ঘন। আমরা ভিডিওটি দেখেছি এবং এ বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যা যা প্রয়োজন তাই করবে নির্বাচন কমিশন। প্রয়োজনে আমরা ঐ এমপিকে চিঠি দিবো।

নির্বাচনের মাসখানেক আগ থেকেই ভান্ডারিয়ায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি’র জেপির মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছে। ইতিমধ্যেই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা রমজানের শেষ দিকে নির্বাচনী উত্তেজনায় ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করে। এঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি একাধিক মামলা হয়। সে মামলায় উপজেলা জাতীয় পার্টি (জেপি) সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জন কারাগারে আছেন।