জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, দেশের মূল্যস্ফীতির পেছনে ভূ-অর্থনৈতিক প্রভাব যতটা না কাজ করছে, তার চেয়ে বেশি কাজ করছে অসাধু সিন্ডিকেটদের নৈরাজ্য। প্রতিদিনের রান্নায় ব্যবহৃত কাঁচা মরিচ, আলু ও ডিম তো আর ইউক্রেন বা রাশিয়া থেকে আসে না। তাহলে এগুলোর দাম বাড়ায় কে?

শুক্রবার (৭ জুলাই) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, এবারের বাজেট ৩টি কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনাভাইরাস এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানাবিধ কারণে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে ‘ডলার সংকট’। টান পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। মূল্যস্ফীতির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাজারে সিন্ডিকেট এবং কিছু অব্যবস্থাপনায় স্বল্প ও মাধ্যম আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। দ্রুত বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

রওশন বলেন, দেশের বাজারে খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে। অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের এখন দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি। সবচেয়ে বেশি বেগতিক অবস্থায় রয়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত।

তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ এতটাই ভয়াবহ যে, এটি যেকোনো দেশ, এমনকি বিশ্বের গতিপথ বদলে দিতে পারে। তাই যৌক্তিক মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার পাশাপাশি নজর দিতে হবে এসব সুযোগ সন্ধানির দিকে, যারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। বিপদে ফেলে দিচ্ছেন পুরো দেশ ও জাতিকে।

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র বক্তব্য দিয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। সব দলকে নির্বাচনমুখী করাই হবে নির্বাচন কমিশনের মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে তারা কতটা সফল হন, এটাই এখন দেখার বিষয়।

রওশন এরশাদ বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের হাতে খুব বেশি সময় নেই। এর মধ্যেই সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করতে হবে। দশকের পর দশক ধরে দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা, সংঘাত ও প্রাণহানির পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকুক, আমরা তা চাই না। অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে একটি ‘মডেল নির্বাচনে’ পরিণত করবে, এটাই প্রত্যাশা।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালিত হবে জনগণের প্রত্যক্ষ মতের ভিত্তিতে। নির্বাচন কমিশন সম্মানিত নাগরিকদের মতামত গ্রহণ করবে। নাগরিকদের মতপ্রকাশের মাধ্যম হচ্ছে ভোট। এই ভোট ব্যবস্থার আয়োজন, গ্রহণ, ভোট গণনা, ফল প্রকাশ করার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইসি। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনকালীন অনেক ক্ষমতাও দিয়েছে রাষ্ট্র। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কমিশন সরকারের কাছে যেকোনও সহায়তা চাইতে পারে এবং সরকার তা দিতে বাধ্য। অতএব, ইসি নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকলেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায়।

জাতীয় নির্বাচনের এখনও পাঁচ মাস বাকি উল্লেখ করে তিনি এখনই মাঠ পর্যায়ে নাগরিকদের ভোট প্রদান বিষয়ে সচেতন করে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

বার্তা বাজার/জে আই